কোয়েল পাখির ১ দিনর বাচ্চা ব্রুডিং শুরু থেকে শেষ, মোঃ মুজাহিদ 01784302963





!!স্বল্প বিনিয়োগে ভাগ্য ফেরাতে পারে কোয়েল!!

স্বল্প বিনিয়োগে,স্বল্প সময়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারে কোয়েল পাখি পালন। চাকুরীর পেছনে না ছুটে কোয়েল পাখি পালন করে এরই মধ্যে স্বাবলম্বী হয়েছে অনেকে। সর্বত্র ব্যপকহারে পালনের মাধ্যমে দেশের চাহিদা পূরন করে কোয়েলের মাংশ ও ডিম রফতানির বড় ধরণের সুযোগ রয়েছে। তাই, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাণিজ্যিকভাবে কোয়েল পালন

করা গেলে বেকারত্ব হ্রাস এবং মানুষের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশে আর্থিক কর্মকা- বাড়াতে পারে বহুগুন।






পাখির মধ্যে অতিক্ষুদ্র প্রজাতি হচ্ছে কোয়েল। কোয়েলের মাংস ও ডিম খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ। কোয়েলের মাংস ও ডিমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ আমিষ,প্রোটিন ও স্নেজাতীয় পদার্থ। যা’ মানব দেহের সুস্থ্যতার জন্য অন্যতম সহায়ক শক্তি। কোয়েলের ডিম আকারে ক্ষুদ্র হলেও একটি মুরগির ডিমের সমান প্রোটিন রয়েছে। আকারে ক্ষুদ্র হওয়ায় মুরগির ডিমের তুলনায় এর দাম অনেক কম। এই পাখি পালনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুবিধার দিক হচ্ছে আকৃতিতে ছোট বলে জায়গা কম লাগে। এমন কি খাঁচায় করে পালন করা যায়। একটি মুরগির জন্য যেটুকু স্থান প্রয়োজন হয় সেই স্থানে ছয় থেকে সাতটি কোয়েল পাখি পালন করা যায়। খুব দ্রুত বেড়ে উঠে এরা। ২৫ থেকে ২৬ দিন বয়সের কোয়েল খাওয়ার উপযোগী হয়। এদের ওজন হয় ১২৫ গ্রাম থেকে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত। ছয় থেকে আট সপ্তাহ বয়সে ডিম পাড়া শুরু করে। ফলে,স্বল্প বিনিয়োগে, স্বল্প সময়ে লাভ পাওয়া যায় অনেক বেশি। বাণিজ্যিকভাবে পালনের ক্ষেত্রে কোয়েলগুলোকে তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন- লেয়ার কোয়েল (খধুবৎ য়ঁধরষ),ব্রয়লার কোয়েল (ইৎড়রষ য়ঁধরষ),ব্রিডার কোয়েল (ইৎববফবৎ য়ঁধরষ)। লেয়ার কোয়েল ঃ লেয়ার কোয়েল সাধারণত খামারে ডিম উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়। মোটামুটিভাবে ৬-৭ সপ্তাহ বয়স থেকে জাপানী কোয়েলী ডিমপাড়া শুরু করে। ব্যবস্থাপনা সঠিক হলে প্রতিটি জাপানী কোয়েলী বছরে ২৫০-৩০০টি এবং ববহোয়াইট কোয়েলী ১৫০-২০০টি ডিম দেয়। ব্রয়লার কোয়েল ঃ নরম ও সুস্বাদু মাংস উৎপাদনের জন্য কোয়েলী নির্বিশেষে কোয়েলগুলোকে ব্রয়লার কোয়েল বলা যায়। মাংস উৎপাদনের জন্য জন্মের দিন থেকে পাঁচ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত এবং ববহোয়াইট কোয়েলকে ৮ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত পালন করা হয়। এ সময়ের মধ্যে জীবিতাবস্থায় একেকটি পাখির ওজন হয় ১৪০-১৫০ গ্রাম এবং ও গুলোতে ভালো পরিমান খাওয়ার উপযোগী মাংস পাওয়া যায়। ব্রিডার কোয়েল, লেয়ার, ব্রয়লার ও শোভাবর্ধনকারী কোয়েলের বাচ্চা ফোটানোর লক্ষ্যে ডিম উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত বাছাই করা প্রজননক্ষম কোয়েল ও কোয়েলীকে ব্রিডার কোয়েল বলা হয়। সাধারণত ৭ থেকে ৮ সপ্তাহ বয়সের জাপানী কোয়েলী ও ১০ সপ্তাহ বয়সের কোয়েল ব্রিডিং খামারে এনে পালন করা হয়। কোয়েল- কোয়েলীগুলোকে ব্রিডিং খামারে ৩০ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত রাখা হয়। ববহোয়াইট কোয়েল ৮ থেকে ১০ সপ্তাহ বয়সে প্রজননক্ষম হয়। প্রজননের জন্য কোয়েল ও কোয়েলীর অনুপাত ১:১ অর্থাৎ এদের জোড়ায় জোড়ায় পালন করতে হয়। কোয়েলের আদি জন্মস্থান জাপানে। সর্ব প্রথম জাপানী বিজ্ঞানীরা কোয়েলকে গৃহ পালিত পাখি হিসেবে পোষ মানানোর উপায় উদ্ভাবন করেন। পরবর্তীতে জাপান সহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কোয়েলকে একটি লাভজনক পোলট্রি উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কোয়েল পালন করার জন্য অতিরিক্ত কোন খরচ হয়না। কোয়েলকে সহজেই পোষ মানানো যায়। বাড়ির যেকোন কোণ বা আঙিনাঅথবা বাড়ির ছাদ ইত্যাদি জায়গাতেও কোয়েলপালন করা যায়। এই কারণে, শহরে কী গ্রামে অনেক স্থানেই কোয়েল পালন ব্যাপক ও সহজতর হয়েছে। গৃহপালিত পাখির মধ্যে অতিক্ষুদ্র এই পাখির আয়তন খুববেশি নয়। একটি মুরগি পালনের জন্য যতটুকু স্থান ব্যবহৃত হয় সেই একই স্থানে ১০-১২টি কোয়েল পালনকরা যায়। মাংসে চর্বির পরিমাণ খুব কম বিধায় রোগীর পথ্য হিসেবে কোয়েলের মাংস উপধেয় খাদ্য হতে পারে। পর্যাপ্ত পুষ্টির চাহিদাও মটাতে পারে কোয়েলের ডিম। বর্তমানে ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, বগুড়া,গাইবান্ধা, ঠাকুরগাও সহ দেশের অনেক জেলাতেই কোয়েল ফার্ম বা কোয়েল পালনের প্রকল্প গড়ে উঠেছে। মুরগি পালনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই কোয়েল পালন করে লাভবান হচ্ছেন।

কোয়েল পালন প্রক্রিয়া : কোয়েলের পালনের জন্য হাঁস মুরগির মতো বিশেষ কোন ব্যবস্থা নিতে হয় না। তবে অন্য সব গৃহপালিত পশু পাখির মতো তাদের বাস্থান যাতে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের মধ্যে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা বিশেষ প্রয়োজন। লিটার বা খাঁচায় কোয়েল পালন করা সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত। একটি খাঁচার ওপর আরেকটি খাচা এভাবে মোটামুটিভাবে অল্প জায়গাতে অনেকগুলো খাচা স্থাপন করে কোয়েল পালন করা যায়। মোটামুটিভাবে ১৩০ থেকে ১৫০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, ৬০ থেকে ১০০ সিন্টিমিটার প্রস্থ এবং ২৫ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার উচ্চতা বিশিষ্ট একটি খাচায় কমপক্ষে ৬০ থেকে ১০০টি কোয়েল পালন করা যায়। তবে কোয়েলের খাঁছায় ব্যবহৃত জালের ফাকগুলো একটু ঘন হতে হবে। যাতে করে পাখির মুখ বা গলা সেই ফাক দিয়ে বাইরে বেরিয়ে না আসে। বাচ্চা রাখার খাচাসহ পরিনত বয়সের কোয়েলের খাঁচাগুলোতে যেন ইদুর, ছুচো ইত্যাদি না ঢুকতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে খাঁচার ফাঁক তৈরি করতে হবে।

কোয়েলের জন্য খাবার এবং পানির সুব্যবস্থা তার খাঁচাতেই রাখতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে,পানি খাবার বা রাখার পাত্র উল্টে যেন তারা ভিজে না যায়। বাড়ির যেখানে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা রয়েছে-সেখানে কোয়েলের খাঁচা তৈরী করা যেতে পারে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে-বৃষ্টির পানি বা অন্য কোন তরলপদার্থ খাঁচায় না যায়। ভেজা বা স্যাত স্যাতে স্থান কোয়েলের স্বাস্থ্যের জন্য মারাতœক হুমকিস্বরুপ। বিশেষ করে কোয়েলের বাচ্চা পালনের সময় একটি অতিরিক্ত যতœ নেওয়া প্রয়োজন। এই সময় বাচ্চাকে ব্রডিং এর ব্যবস্থা করতে হয়। বাচ্চার বয়স ২১ দিন পর্যন্ত কৃত্রিম উত্তাপের মাধ্যমে এই ব্রডিং এর ব্যবস্থা করতে হয়। কোয়েলের পালনের জন্য ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে যের বিষয়গুলো খেয়াল রাখা প্রয়োজন সেগুলো হচ্ছে, পাখিদের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা। প্রাকৃতিক আলো-বাতাস নিশ্চিত করা ও প্রয়োাজন মতো তা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রাখা। অতিরিক্ত শীত, গরম বা বৃষ্টি ও স্যাঁতসেঁতে অবস্থা থেকে পাখিদের রক্ষা করা। বিভিন্ন বয়সের কোয়েলের জন্য পৃথক ঘরের ব্যবস্থা করা। খামারে পাখির মল-মূত্রের কারণে যে কোন দুর্গন্ধ না হয়, সেজন্য আগে থেকেই সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। রোগ-জীবাণু মুক্ত পরিবেশ তৈরী করা প্রভৃতি।

কোয়েলের খাদ্য ও রোগব্যাধি : কোয়েল পাখিকে শুষ্ক গুঁড়া-ম্যাশ ফিড প্রদান করতে হবে। চার সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিটি কোয়েল দিনে চার গ্রাম করে খাদ্য খায়। পঞ্চম সপ্তাহ বয়স থেকে দৈনিক প্রতিটি কোয়েল ২০ থেকে ২৫ গ্রাম খাদ্য খায়। একটি কোয়েলের বছরে খাদ্য লাগে আট কেজি। কোয়েল পাখির খাদ্য তালিকায় রয়েছে গম ভাঙ্গা, ভুট্টা, চালের কুঁড়া, শুকনো মাছের গুঁড়া, তিলের খৈল, সয়াবিনের খৈল, ঝিনুকের গুঁড়া ও লবণ। চার সপ্তাহ বয়স পর্যন কাক্সিক্ষত বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন যুক্ত খাবার দিতে হয়। তবে প্রতি ১০০ কেজি খাদ্যে ২০০ মিলিমিটার প্রোপিয়নিক এসিড মেশানো হলে খাদ্য আর সংক্রমিত হয় না। রোগব্যাধি : কোয়েল পালনের অন্যতম সুবিধা হল এরা মুরগী বা অন্য পাখির তুলনায় রোগব্যাধিতে কম আক্রান্ত হয়। কোয়েলের রোগব্যাধি কম বলে এগুলোকে টিকা দিতে হয়না এবং কৃমির ঔষধও খাওয়ানোর প্রয়োজন পড়ে না। তবে, এদের যতেœর অবহেলা হলে মুরগীর ন্যায় ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, রক্ত আমাশয়,মাইকোপাজমা সহ প্রভৃতি রোগে আক্রান্ত করতে পারে। সে কারণে সর্বদা ওদের ওপর দৃষ্টি রাখা এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন রয়েছে। এতে করে ছোটখাটো রোগ হলে সহজেই যেমন নিরাময়ের মাধ্যমে রোগমুক্ত পারিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হবে।

পাখি পালনে প্রশিক্ষণ : বাণিজ্যিকভাবে কোয়েল পাখি পালন করতে হলে এ বিষয়ে অভিজ্ঞদের কাছ থেকে প্রাথমিক প্রশিক্ষন নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া এরই মধ্যে যারা সফলতা পেয়েছে তাদের কাছে থেকে কোয়েল পালনের বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যায়। তা’ছাড়া পাখি পালন সংক্রান্ত কোন তথ্য জানতে হলে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ে পশু কর্মকর্তা অথবা প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্ধারিত ফি এর বিনিময়ে পশু পালন বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়।

সফলতা পেয়েছেন যারা : বিশাল জনগোষ্টির এই দেশে মাংস ও ডিমের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। যে কারণে বাংলাদেশে গরু,ছাগল,হাস,মুরগি বা অন্য কোনো পশু পক্ষি লালন পালন খুবই লাভজনক ব্যবসা। সারাদেশে বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পক্ষি লালন-পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছে বহু মানুষ। এমনকি দেশের নানান প্রান্তে কোয়েল পাখি পালন করে এরই মধ্যে ভাগ্য ফিরিয়েছেন অনেকে। নরসিংদীর দিদার আলম, গাইবান্ধা আবুল্লারপাড়া গ্রামের আহসান হাবীব সুজা, ঝিনাইদহের বেকার যুবক মীর কামরুল ইসলাম,ঠাকুরগাওয়ের মেহেদী হাসান লেনিন

ঝালকাঠির বেকার যুবক কামাল সহ অনেকেই কোয়েল পালন করে শুধু স্বাবলম্বী নয়। রীতিমতো তারা এখন প্রতিষ্ঠিত। কিভাবে তারা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে সংক্ষেপে তাদের কয়েকজনের কার্যক্রম তুলে ধরা হলো।

নরসিংদীর দিদার আলম: নরসিংদীতে দিদার আলম’র কোয়েল পাখির খামার এনে দিয়েছে এলাকার শত পরিবারের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা। মাত্র ২০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু হয় এই কোয়েল পাখি পালন। ১২ বছরের ব্যবধানে এই খামার দিয়েই দিদার আলম এখন কোটিপতি। শুধু তাই নয়, তার এই কোয়েল পাখির খামারের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এলাকার শতাদিক পরিবারের অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিয়েছে। নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার চরনগরদী বাজারের পাশের ব্রক্ষপুত্র নদীর তীরের পলাশেরচর গ্রামের অধিবাসী যুবক দিদার আলম। ১২ বছর আগে সদর উপজেলার কাঠালিয়া ইউনিয়নের তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান এবায়েদ হোসেন’র কাছে থেকে মাত্র ৬শত কোয়েল পাখির বাঁচ্চা ক্রয় করে সিমিত আকারে পালন শুরু করেন। এ সময় তার সর্বমোট খরচ হয় মাত্র ২০ হাজার টাকা। তার খামার থেকে আহরিত ডিম এলাকার বেকার যুবকদের মাধ্যমে গ্রামের হাটে-বাজারে বিক্রি শুরু করে। সুস্বাধু এই ডিমের চাহিদা ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পায়। প্রথম বছরেই ভালো লাভের মূখ দেখতে পান তিনি। এরপর ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হয় পাখির খামারটি। তার এই খামার দেখে এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। যার ফলে আশ পাশের লোকজনের মধ্যে কোয়েল পালনের আগ্রহ তৈরী হলে দিদার বাঁচ্চা ফুটানোর জন্য ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করে একটি যন্ত্র (ইনকিউভেটর) ক্রয় করে বাঁচ্চা ফুটানো শুরু করেন। এরপর থেকে তিনি আশ পাশের এলাকায় বাঁচ্চা বিক্রি শুরু করেন। এভাবে পলাশেরচরের অন্যান্যরা ২০-২৫টি খামার গড়ে তোলেন। এভাবে দিনদিন তার এই ব্যবসা প্রসার হতে থাকলে ২০০৭ সালে খামারে সারাদেশের ন্যায় বার্ডফ্লু রোগে আক্রান্ত হয়ে খামারটি এক পর্যায়ে ধ্বংশ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। এঅবস্থায় সরকার তাকে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরন দেয়। এরপর শুরু হয় নতুন উদ্যমে কোয়েল পালন। সংগ্রহ করেন ৪টি বাঁচ্চা ফুটানোর যন্ত্র (ইনকিউভেটর)। যা দিয়ে একসাথে ২২ হাজার বাঁচ্চা উৎপাদন সম্ভব। ৪টি মেশিন দিয়ে বাঁচ্চা ফুটিয়ে তিনি বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন। ডিম বিক্রির পাশাপাশি বাঁচ্চা বিক্রিতেও ব্যাপক সাড়া সাড়া ফেলতে সক্ষম হন তিনি। দিদার আলম এই ১২ বৎসরে কোয়েল পাখির খামার দিয়ে কোটি টাকা ব্যয় করে একটি বাড়ি নির্মান করে। যার ছাদে রয়েছে একটি কোয়েল পাখির খামার। এই খামারে রয়েছে ১০ হাজারের মতো পাখি। পাশের গ্রামের আরেকটি খামার রয়েছে তার। সেখানেও রয়েছে আরো ১০ হাজার পাখি। তার বাড়ির খামার থেকে এখন দৈনিক ৮-৯ হাজার ডিম পাওয়া যায়। এই ডিম হাটে-বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হয়। প্রতিটি ডিম বিক্রি হয় দুই টাকা করে। অপর খামারের ডিম দিয়ে বাঁচ্চা ফুটিয়ে বিক্রি করা হয়।

গাইবান্ধার আহসান হাবীব সুজা : গাইবান্ধা শহর থেকে অন্তত ৩০ কিলোমিটার দূরে উপজেলার নাম সাঘাটা। গ্রামের নাম আবুল্লারপাড়া। এ গ্রামের বাসিন্দা সাবেক সেনাসদস্য আহসান হাবীব সুজা। অবসর গ্রহণের পর ২০১০ সালে ৩০০ কোয়েল পাখি নিয়ে একটি খামার তৈরি করেন। স্ত্রী শিউলীর নামে নাম রাখেন এস এগ্রো ফার্ম। ৩০০ কোয়েল পাখি নিয়ে শুরু করলেও এখন তার খামারে ৮০ হাজার পাখি। প্রতিদিন ডিম আর বাচ্চা বিক্রি করে আয় হচ্ছে ৬০ হাজার টাকা। পাখির মাংসের চাহিদা মিটিয়ে কোয়েল পাখি গাইবান্ধা ছেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। অন্যদিকে প্রতিদিন গড়ে আয় হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। পিতার জমিজুড়ে খামার গড়ে তোলেন। আবাদি জমির ওপর বড় আকারে খনন করেন পুকুর। পুকুরে হয় মাছের চাষ। আর তার চারপাশে বিশাল চালায় গড়ে তোলেন কোয়েল পাখির খামার। খামার পরিচর্যার জন্য নিয়োগ করেন লোকজন। তারপর এক বছরের মাথায় পাখির সংখ্যা যেমন বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে ডিম। মাত্র ৬ মাসের মধ্যে ৭০ হাজার পাখির খামারে পরিণত হয়। খামার থেকে প্রতিদিন কোয়েল পাখি ও ডিম যাচ্ছে ঢাকার পাইকারি আড়তগুলোতে। তাতে প্রতিদিন ডিম আসে ১৫ থেকে ২০ হাজার আর কোয়েল পাখি বিক্রি হয় ১০ থেকে ১১ হাজার। তাতে নগদ আসে ৬০ হাজার টাকা। গ্রামের অন্তত ৮০ জন বেকারের কর্মসংস্থান হয়েছে এই খামারকে কেন্দ্র করে। অনেকে পাখি ও ডিম ফেরি করে ছেলেমেয়ের পড়ালেখা ও সংসারের খরচের যোগান দিচ্ছে। তাদের প্রতিদিন রোজগার হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।

ঝিনাইদহের মীর কামরুল ইসলাম : পাখির চাষ করে স্বাবলম্বি হয়েছেন ঝিনাইদহের বেকার যুবক মীর কামরুল ইসলাম। তার বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের চন্ডিপুর বাজার সংলগ্ন পার্বতীপুর গ্রামে। বেকারত্বের অভিষাপ থেকে মুক্তি পেতে এক সময় তিনি সহায় সম্বল বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। কিন্তু এতেও তার ভাগ্যের কোন উন্নতি হয়নি। উপরন্তু তার জীবনে নেমে আসে প্রবাস জীবনের নানা বিড়ম্বনা। ফলে তিনি ২০০৯ সালের শেষ দিকে দেশে ফিরে আসেন। মীর কামরুল ইসলাম তার বেকার জীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, দেশে ফেরার পর তার এক আত্মীয়র পরামর্শে তিনি দু’বছর আগে যশোরের বার্ড প্যালেস হ্যাচারী থেকে একদিনের কোয়েল পাখির সাড়ে ৪ হাজার বাচ্চা প্রতিটি ৫ টাকা দরে কিনে এনে নিজ বাড়িতে পরিচর্যা শুরু করেন। দিন দিন দ্রুত বেড়ে উঠে পাখিগুলো। এক পর্যায় প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার ডিম দেওয়া শুরু করে। এভাবে প্রতিদিন খরচ বাদে দুই হাজার টাকারও বেশি আয় হয় তার। এক বছরের মাথায় তার সব খরচ-খরচা বাদ দিয়ে প্রতি মাসে আয় দাড়াঁয় প্রায় ৬০ হাজার টাকার ওপর। মাত্র ৩০ হাজার টাকা পুজিঁ নিয়ে শুরু করা এই ব্যবসা অল্প সময়ে তার আর্থিক স্বচ্ছলতা এনে দেয়। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি হয়ে উঠছেন তিনি। দিন যত যাচ্ছে খামাওে পাখির সংখ্যা ও আয় সমানে বেড়ে চলেছে। তাই স্বাচ্ছন্দে জীবন কাটছে তার। কামরুল ইসলাম মনে করেন, দেশে বা বিদেশে চাকুরীর পেছনে না ছুটে অল্প পুজিঁতে অতি সহজেই কোয়েল পাখির চাষ করে স্বাবলম্বি হতে পারে যে কেউ।

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »

2 comments

comments
১৪ ডিসেম্বর, ২০২০ এ ১:৫১ AM delete

আমি রেডি পাখি বিক্রি করতে চাই ছোট বড় সকল প্রকার বাচ্চা এবং বড় পাখি যোগাযোগ
০১৭৭৪৯২২৬৯৯

Reply
avatar
১১ অক্টোবর, ২০২২ এ ৭:১৩ PM delete

একদিনের কোয়েলপাখির বাচ্চা কত দাম প্রতি পিচ ৫০০ নিবো

Reply
avatar